শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন
আকরাম হোসেন নান্দাইল ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরুইল ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের চেয়ারম্যান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সরকারি জমি ও খাল দখল করে পুকুর খনন, খামার নির্মাণ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকায় ‘বালুখোর’ নামে পরিচয় পাওয়া সাইফুল ইসলামের হাত থেকে গ্রামের নিরীহ মানুষ থেকে শুরু করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনও রক্ষা পায়নি। তাদের জায়গা-জমি জবরদখল করে বিশাল মাছের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি।
স্থানীয় প্রশাসন এবং ভূমি অফিস চেয়ারম্যান সাইফুলের সকল অপকর্মের সত্যতা পেলেও আওয়ামী লীগের সাবেক দুই এমপির রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারণে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি অভিযোগ স্হানীয়দের। তবে শিগগিরই অভিযান পরিচালনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
একাধিক সূত্র জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের কচুরি মৌজার সরকারি জায়গায় এবং খাল অবৈধভাবে দখল করে পুকুর খনন করেছেন এমনকি সেখানে মাছ চাষের পাশাপাশি মুরগির খামারও তৈরি করেছেন। সরেজমিনে গিয়েও এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, খাল ভরাট করে তার মালিকানা জমির সাথে একীভূত করে নিজ দখলে রেখেছেন সাইফুল ইসলাম। এদিকে খাল ভরাট করায় পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে একদিকে শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়ায় কৃষকের ফসল বিনষ্ট হচ্ছে এবং অন্যদিকে পানির সময়ে ফসল ডুবে লোকশানের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় প্রতিবেশীরা। তবে ভয়ে কেউই তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেন না।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে আরও দেখা গেছে, চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বেশ কয়েকটি জায়গায় পাহাড় সমান বালু স্তুপ করে বিক্রি করছেন। ভারি ট্রাক্টর দিয়ে বালু পরিবহণ করায় একদিকে স্থানীয় রাস্তাঘাট যেমন নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় নিরীহ মানুষদের বাড়িঘর এবং জমিসহ পার্শ্ববর্তী অন্য জমির ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং অসংখ্য ফসলি জমি হুমকির মুখে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী জানান, আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় না থাকলেও তার ক্ষমতা বিন্দু পরিমাণও কমেনি। আশেপাশের লোকজন ও প্রতিবেশীদের আগেও যেভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, এখনও তার সাঙ্গপাঙ্গদের দিয়ে জবরদখল অব্যাহত রেখেছে। যেই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চায়, তাকেই সে নানাভাবে হয়রানি করে। এর আগে কয়েকবার সংখ্যালঘু ও গ্রামের নিরীহ মানুষের জায়গা-জমি জবরদখল করে মাছের খামার গড়ে তোলার অভিযোগে প্রশাসনের কাছে বিচার চাইতে গেলেও দলীয় প্রভাবের কারণে তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে তার বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ব্যাপারে সরকারি জায়গায় এবং খাল দখল করে পুকুর খননের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, এসমস্ত জমিগুলো আগে নামা বিল বা ডোবা ছিল। খালের চারদিকে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বা আমার বাপ দাদার সম্পত্তি। এই সম্পত্তির চতুর্দিকে পাড় নির্মাণ করে পুকুর করা হয়েছে যৌথভাবে, অর্থাৎ এখানে বিভিন্ন মালিক বিদ্যমান রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি যখন পুকুরের পাড় নির্মাণ করি তখন হয়তো সরকারি জায়গা বা খাল বলা হচ্ছে মাঝখানে পরে যায়।এই জমি যদি সরকার নিয়ে নেয়, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। আর অন্যকোন জায়গাতেও যদি দখল হয়ে থাকে, তাহলে সরকার যদি নিয়ে যায় আমার কোন আপত্তি নেই। তবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং নিরীহ মানুষদের জোরপূর্বক জমি দখলের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা নিয়ে পূর্বে তদন্ত হলেও কোন প্রমাণ নেই। এখন পর্যন্ত কারো একশতক জায়গায় বা এক ইঞ্চি বেদখল করেছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারলে তাহলে আমি নাকে খড় দিবো, অন্যথায় যারা অভিযোগ করে তাদের নাকে খড় দিতে হবে।বালু উত্তোলনের সাথে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
তবে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুর রহমান বলেন, সিংরইল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গায় এবং খাল দখল করে মাছের খামার নির্মাণ করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। আর অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি বিষয়ে খুঁজ নিচ্ছি প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, যদি অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বা সরকারি জায়গায় দখল করে পুকুর নির্মাণ করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্হা নেওয়া হবে।